ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন
গর্ভাবস্থা উত্তেজনা ও প্রত্যাশায় পূর্ণ একটি বিশেষ সময়। যদিও স্বাভাবিক সময়ে এই অভিজ্ঞতাটি সুখকর হয়ে থাকে, তবে করোনাভাইরাস রোগের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করা সন্তান প্রত্যাশী মায়েদের জন্য এই সময়টি ভয়, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তায় ভরে উঠেছে। নারীরা কীভাবে নিজেদের এবং তাদের ছোট্ট শিশুটিকে সুরক্ষিত রাখতে পারে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত গবেষণায় যতদূর দেখা গেছে, অন্য যেকোনো শ্রেণির মানুষের তুলনায় গর্ভবতী নারীরা কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে নেই। বলা হচ্ছে যে, তাদের দেহ এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসার কারণে গর্ভবতী নারীরা গর্ভাবস্থার শেষের দিকে মাসগুলোতে অত্যন্ত বাজেভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে। আর তাই আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি অনেক কঠিন হতে পারে – অবশ্যই তারা নিজেদের এবং তাদের শিশুর যত্ন নিচ্ছেন এবং অনেকের হয়তো আরও সন্তান রয়েছে – তবে এখন পর্যন্ত আমরা যতদূর জানি, অন্য মানুষের যতটা ঝুঁকিতে থাকে, গর্ভবতী নারীরা তার চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে নেই। এই কারণে অন্য সবাই যা করে তাদেরও সেটাই করা উচিত। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলার পরামর্শ রইল:
♥ কারোনাভাইরাস রোগের (কোভিড-১৯) লক্ষণ রয়েছে এমন কারো সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
♥ সম্ভব হলে গণপরিবহন এড়িয়ে চলুন।
♥ সম্ভব হলে বাড়িতে থেকে কাজ করুন।
♥ পাবলিক প্লেস বা লোকালয়, বিশেষ করে বন্ধ বা দেয়ালঘেরা স্থানগুলোতে ছোট-বড় সব ধরনের জমায়েত পরিহার করুন।
♥ বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শারীরিক সংস্পর্শ পরিহার করুন।
♥ আপনার ধাত্রী, প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবাদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য টেলিফোন, মেসেজ বা অনলাইন সেবা ব্যবহার করুন।
♥ অতিরিক্ত সুরক্ষামূলক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে – সাবান ও পানি দিয়ে বার বার হাত ধোয়া, ঘরে বার বার স্পর্শ করা হয় এমন স্থান/জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা, কোভিড-১৯ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো লক্ষণ নিজের মাঝে দেখা যাচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা এবং থাকলে শুরুতেই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সেবা গ্রহণ করা।
শিশুকে নিরাপদে দুধ পান করানঃ
“আমরা যতদূর জানি, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো অব্যাহত রাখা পুরোপুরি নিরাপদ। এখন পর্যন্ত যত গবেষণা হয়েছে তার সবগুলোতে দেখা গেছে, কোভিড-১৯ ভাইরাসটি বুকের দুধের মাধ্যমে ছড়ায় না, তাই একজন মা তার সন্তানের জন্য সবচেয়ে ভালো যে কাজটি করতে পারেন তা হচ্ছে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো।”
যদি আপনার সন্দেহ হয় যে, আপনি কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিকিৎসা গ্রহণ করুন। এক্ষেত্রে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর নির্দেশাবলী অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে মায়েদের যথেষ্ট সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত – সম্ভব হলে মাস্ক পরা, শিশুকে ধরার আগে ও পরে হাত ধোওয়া এবং ঘরের মেঝে বা অন্যান্য স্থান পরিষ্কা/জীবাণুমুক্ত করা। যদি আপনি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর মতো সুস্থ না থাকেন, তাহলে স্তন চেপে দুধ বের করে একটি পরিষ্কার কাপ বা চামচের সাহায্যে আপনার শিশুকে তা খাওয়ান – এক্ষেত্রেও যাবতীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
তবে এটি সত্যি যে, বিশ্বজুড়ে অনেক নারী অন্যান্য অনেক লোকের কাছাকাছি অবস্থান করেন, যা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। ক্যাদি বলেন, এ ধরনের স্থানগুলোতে আমি পুরো কমিউনিটিকে বলবো তাদের কমিউনিটিতে থাকা গর্ভবতী নারীদের যত্ন নিতে। এক্ষেত্রে তার সুপারিশ হচ্ছে, লোকজন গর্ভবতী নারীদের কাছ থেকে যতোটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখবেন এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা করবেন।
আর কমিউনিটিতে সবার হাত ধোওয়ার গুরুত্ব ভুলে যাওয়া যাবে না।”এমনি এমনি হাত ধোওয়ার কথা বলা হচ্ছে না। কোভিড-১৯ ও সাবান একে অপরকে পছন্দ করে না। এটি খুব সহজ একটি ব্যবস্থা যা অনেক ভালো কিছু দিতে পারে।” আমি সত্যিই আশা করবো যে, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন পুরো কমিউনিটি এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলবে যেখানে গর্ভবতী নারীরা নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবে, কেননা তারা সর্বোপরি একটা ভবিষ্যতের জন্ম দিচ্ছে। এটাকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন!”
লেখক : ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন ,নার্স ও পুষ্টিবীদ,কক্সবাজার।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।